top of page

ফিজিওথেরাপি বনাম ব্যথার ওষুধ



অসুখ হলে ওষুধ খেতে হয়- আমাদের সাধারণ ধারণা এমনই। আধুনিক বিজ্ঞান কি এ কথা সব সময় সমর্থন করে? না, কারণ আধুনিক পৃথিবী ক্রমশ ওষুধ, বিশেষ করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে এমন ওষুধ গ্রহণের বিরোধী।

এখন চিকিৎসার উদ্দেশ্য কেবল রোগ ভালো করা নয়, একটি রোগ ভালো করতে গিয়ে যাতে শরীরের অন্য ক্ষতি না হয়ে যায় সে দিকেও খেয়াল রাখেন চিকিৎসকরা। যেমন শারীরিক ব্যথা; ব্যথাবিরোধী ওষুধগুলো আমাদের শরীরে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে থাকে, যা অনেক সময় মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।


শারীরিক ব্যথার ধরন : যেসব শারীরিক ব্যথা আমাদের বেশি ভোগায় তার মধ্যে ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কাঁধ, হাতের কুনুই, পায়ের গোড়ালি এবং পিঠ ব্যথা অন্যতম। চল্লিশোর্ধ্ব নারী-পুরুষ সবচেয়ে বেশি ভুগে থাকেন। যারা দীর্ঘ সময় অফিসে বসে কাজ করেন অথবা প্রতিদিন অফিসে যাতায়াতের জন্য যানবাহনে বসে থাকেন তাদের মধ্যে ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।

এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের ঘাড়, কোমর, হাঁটু ও কাঁধ ব্যথা বেশি হয়। তাছাড়াও যারা ভারি কাজ অথবা সংসারের কাজ যেমন কাপড়কাঁচা ঘরমোছা ইত্যাদি অত্যধিক পরিমাণে করে থাকেন তাদেরও ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।


ব্যথার ওষুধ কীভাবে কাজ করে : ব্যথার ওষুধ গ্রহণের ফলে এর উপাদান পাকস্থলি থেকে রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছায় এবং কোষ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটায় যা বিভিন্ন মেকানিজম (যেমন- পেইন গেট থিউরি)-এর মাধ্যমে ব্যথার স্থানের প্রদাহ কমাতে চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যথার ওষুধ পাকস্থলি ও কিডনির মাধ্যমে শরীরে ছড়ায় বলে তা পাকস্থলিতে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে অথবা আগে থেকেই পাকস্থলিতে ক্ষত বা আলসার থাকলে তা বাড়িয়ে দিতে পারে।

একইভাবে দীর্ঘদিন কিডনি দিয়ে ব্যথার ওষুধ নিঃসরণ হলে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া ব্যথার ওষুধ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন- ঘাড় ব্যথার জন্য কেউ ব্যথানাশক সেবন করল, তা কি শুধু ঘাড়েই ছড়াবে? না, এই ওষুধের উপাদানগুলো রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে পৌঁছে যাবে এবং শরীরের সুস্থ অংশে অনাকাক্সিক্ষত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। বিষয়টি মশা মারতে কামান দাগার মতোই অনভিপ্রেত। তাই দীর্ঘদিন ব্যথানাশক সেবন করলে তা শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবেই।


ফিজিওথেরাপি কীভাবে কাজ করে : ফিজিওথেরাপি স্থানীয় বা লোকাল চিকিৎসা। অর্থাৎ শরীরের যে অংশ ব্যথায় আক্রান্ত সাধারণত সেই অংশেই ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ করা হয়। শুধু ব্যথা নিরাময় ফিজিওথেরাপির উদ্দেশ্য নয়, ব্যথার কারণ নির্ণয় করে তা নির্মূল করাই এর লক্ষ্য। ধরুন, পিএলআইডি বা কোমরের কশেরুকার চাকতি সরে গিয়ে তা স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করে কোমর ও পায়ে ব্যথা সৃষ্টি করল।

এ ক্ষেত্রে ব্যথার ওষুধের কাজ কি? ব্যথানাশক কেবল সাময়িকভাবে ব্যথা কমাতে পারবে কিন্তু স্নায়ুর ওপর যে চাপ সৃষ্টি হল তা সরানোর ক্ষমতা ব্যথার ওষুধের নেই। পক্ষান্তরে ইলেক্ট্রোথেরাপির মাধ্যমে সাময়িক ব্যথা নিয়ন্ত্রণ এবং ম্যানিপুলেটিভ থেরাপির মাধ্যমে স্নায়ুর চাপ সরানো সম্ভব। অর্থাৎ ফিজিওথেরাপি ব্যথা ও ব্যথার কারণ দুটোর উপরেই কাজ করে।

তাই এটি দ্রুত ও কার্যকরি এবং যেহেতু এটি কিডনি ও পাকস্থলির ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না, তাই এটি গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।


অন্যান্য রোগে ফিজিওথেরাপি : ব্যথা ছাড়াও স্ট্রোক পারালাইসিস, বেলস পালসি ইত্যাদিতেও ফিজিওথেরাপি বেশ কার্যকর। মুখ বেঁকে যাওয়া বা বেলস পালসিতে রোগীরা প্রদাহ ও ভাইরাসবিরোধী ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ফিজিওথেরাপি নেয়া শুরু করলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর স্ট্রোক প্যারালাইসিস রোগীরা একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের অধীনে চিকিৎসা নিলে স্ট্রোক নিরাময় হয়ে আবার কর্মক্ষমতা ও সচলতা ফিরে পেতে পারেন।


কোথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পাবেন : সঠিক ফিজিওথেরাপির প্রথম ধাপ হল সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়। ঠিক কি কারণে আপনার শরীরে ব্যথা হচ্ছে তা নির্ণয় করতে না পারলে কখনই ফিজিওথেরাপি ফলপ্রসূ হবে না। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়; হার্টের রোগ বা প্রেসার থেকে অনেক সময় ঘাড় কাঁধ বা বুক ব্যথা হতে পারে কিন্তু কারণ না জেনেই যদি এসব ক্ষেত্রেও ফিজিওথেরাপি প্রয়োগ করা হয় তা কি কাজ করবে?

তাই প্রথমেই ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞকে রোগ নির্ণয় করার সুযোগ দিতে হবে। আবার অনেকেই ফিজিওথেরাপির নামে না জেনে বিভিন্ন ধরনের ম্যাসাজ বা মালিশ বা টানাটানি করে থাকেন। এটিও হিতে বিপরীত ফল আনতে পারে। তাই একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি নিলেই তা সবচেয়ে ভালো ফল দেবে। যত্রতত্র গজিয়ে উঠা সেন্টারে ফিজিওথেরাপি না নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।


শেষ কথা : ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। এ চিকিৎসা নিয়ে অবহেলার সুযোগ নেই। একজন রোগীর সুস্থ হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ফিজিওথেরাপি নেয়া উচিত। অনেই মনে করেন সাময়িক আরাম পাওয়ার জন্যই ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়।

ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। সাময়িক ব্যথা মুক্তির জন্য আপনি ব্যথানাশক খেতে পারেন, কিন্তু ফিজিওর মূল্য উদ্দেশ্য হল রোগীকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যথা ও ব্যথার কারণ মুক্ত করা এবং প্যারালাইসিসসহ অন্যান্য অচল রোগীর সচলতা ফিরিয়ে দেয়া।


 
 
 

Comments


​আপনি কি অসুস্থ্য?
অস্বস্তি বোধ করছেন? পরামর্শ?

ইমারজেন্সি? অ্যাম্বুলেন্স? হসপিটাল সার্ভিস?

এখনই ফোন করুন আমাদের হেল্প লাইন নাম্বারে

Emergency HelpLine: +88017 6655 6655

  • Facebook
27-with-Trans.png
R_edited.png
শহীদ খাজা নিজামুদ্দিন রোড । ঝাউতলা । কুমিল্লা । বাংলাদেশ ।

© 1996-2024 by Moon Hospital Ltd Cumilla. All rights reserved.

Thank you for your trust in Moon Hospital, Cumilla, Bangladesh

bottom of page